Sushant Singh Rajput Case Update: তাঁর মৃত্যু নতুন তথ্য দিল CBI
দীর্ঘ পাঁচ বছরের তদন্তের পর, ২০২৫ সালের ২২ মার্চ সিবিআই মুম্বাইয়ের আদালতে Sushant Singh Rajput এর মৃত্যু মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়।
Sushant Singh Rajput Latest News
বলিউডের উজ্জ্বল নক্ষত্রদের মধ্যে একটি নাম ছিল সুশান্ত সিং রাজপুত। একজন প্রতিভাবান অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী, এবং স্বপ্নদ্রষ্টা হিসেবে তিনি লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তবে, তাঁর আকস্মিক মৃত্যু ২০২০ সালে গোটা দেশকে শোকের সাগরে ডুবিয়ে দিয়েছিল। তাঁর জীবনের গল্প এবং মৃত্যু রহস্য নিয়ে বছরের পর বছর ধরে চলা তদন্ত সম্প্রতি একটি নতুন মোড় নিয়েছে। সিবিআই তাঁর মৃত্যু মামলার তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছে এবং এটিকে আত্মহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা সুশান্তের জীবনের বিভিন্ন দিক এবং মামলার সর্বশেষ আপডেট নিয়ে আলোচনা করব।

Sushant Singh Rajput: প্রারম্ভিক জীবন ও শিক্ষা
সুশান্ত সিং রাজপুত ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি ভারতের বিহারের পাটনায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা কৃষ্ণ কুমার সিং একজন সরকারি কর্মচারী ছিলেন। পরিবারের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সুশান্ত ছিলেন সবচেয়ে ছোট। তাঁর এক বোন, মিতু সিং, রাজ্য পর্যায়ের ক্রিকেটার। সুশান্তের শৈশব কেটেছে পাটনায়, তবে ২০০২ সালে মায়ের মৃত্যুর পর তাঁর পরিবার দিল্লিতে চলে আসে।
শিক্ষায় অত্যন্ত মেধাবী সুশান্ত দিল্লি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং-এ মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি হন। তিনি জাতীয় স্তরের প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে একাধিক পুরস্কার জিতেছিলেন। কিন্তু তাঁর মন ছিল শিল্পের দিকে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে পড়তে তিনি থিয়েটারে যোগ দেন এবং অভিনয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়তে থাকে। শেষমেশ তিনি পড়াশোনা ছেড়ে মুম্বাইয়ে পাড়ি দেন স্বপ্ন পূরণের আশায়।
টেলিভিশন থেকে বলিউড: এক উজ্জ্বল যাত্রা
সুশান্তের ক্যারিয়ার শুরু হয় টেলিভিশনের মাধ্যমে। ২০০৮ সালে তিনি স্টার প্লাসের ধারাবাহিক কিস দেশ মে হ্যায় মেরা দিল-এ প্রীত জুনেজার চরিত্রে অভিনয় করে দর্শকদের নজরে আসেন। তবে, তাঁর জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌঁছায় জি টিভির পবিত্র রিস্তা ধারাবাহিকে মানব দেশমুখের ভূমিকায়। এই চরিত্র তাঁকে ঘরে ঘরে পরিচিত করে তোলে এবং একাধিক টেলিভিশন পুরস্কার জিতিয়ে দেয়।
টেলিভিশনের সাফল্যের পর সুশান্ত সিনেমার দিকে পা বাড়ান। ২০১৩ সালে কাই পো চে! ছবির মাধ্যমে তিনি বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেন। ছবিটি সমালোচক এবং দর্শকদের কাছে সমাদৃত হয়। এরপর শুদ্ধ দেশি রোমান্স, পিকে, এবং এম এস ধোনি: দ্য আনটোল্ড স্টোরি ছবিতে তাঁর অভিনয় দক্ষতা প্রমাণ করে। বিশেষ করে ধোনির বায়োপিকে তাঁর অভিনয় তাঁকে বলিউডের শীর্ষস্থানীয় অভিনেতাদের তালিকায় নিয়ে যায়। কেদারনাথ এবং ছিছোরে ছবিও তাঁর ক্যারিয়ারে মাইলফলক হয়ে ওঠে। তাঁর শেষ ছবি দিল বেচারা মৃত্যুর পর মুক্তি পায় এবং দর্শকদের মনে গভীর ছাপ ফেলে।
স্বপ্নদ্রষ্টা সুশান্ত: অভিনয়ের বাইরেও এক জীবন
সুশান্ত শুধু অভিনেতা ছিলেন না, তিনি ছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। বিজ্ঞান, মহাকাশ, এবং প্রযুক্তির প্রতি তাঁর গভীর আগ্রহ ছিল। তিনি নাসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে গিয়েছিলেন এবং নিজের টেলিস্কোপ কিনে তারার জগৎ অন্বেষণ করতেন। তিনি একজন উদ্যোক্তা হিসেবেও কাজ শুরু করেছিলেন এবং সামাজিক কাজে অংশ নিতেন। তাঁর জীবনের এই বহুমুখী দিকগুলো তাঁকে অনন্য করে তুলেছিল।
মৃত্যু এবং রহস্যের শুরু
২০২০ সালের ১৪ জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজের ফ্ল্যাটে সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। মুম্বাই পুলিশ প্রাথমিকভাবে এটিকে আত্মহত্যা বলে ঘোষণা করে। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়, শ্বাসরোধের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু এই রায় অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। তাঁর ভক্তরা, পরিবার এবং সাধারণ মানুষ এটিকে খুন বলে সন্দেহ করেন। সামাজিক মাধ্যমে #JusticeForSushant হ্যাশট্যাগ ট্রেন্ড করতে থাকে।
সুশান্তের বাবা কে কে সিং পাটনায় তাঁর প্রাক্তন প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করেন। অভিযোগে বলা হয়, রিয়া সুশান্তকে আত্মহত্যার প্ররোচনা দিয়েছেন এবং তাঁর আর্থিক শোষণ করেছেন। এরপর মামলাটি সিবিআই, এনসিবি এবং ইডি-র হাতে তুলে দেওয়া হয়। তদন্তে মাদক সংযোগ এবং আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ উঠে আসে। রিয়া ও তাঁর ভাই শৌভিককে গ্রেফতার করা হয়, যদিও পরে তাঁরা জামিনে মুক্তি পান।
CBI তদন্ত এবং সর্বশেষ আপডেট
দীর্ঘ পাঁচ বছরের তদন্তের পর, ২০২৫ সালের ২২ মার্চ সিবিআই মুম্বাইয়ের আদালতে তাঁর মৃত্যু মামলার চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেয়। এই রিপোর্টে সিবিআই স্পষ্ট করে বলেছে যে, সুশান্তের মৃত্যু আত্মহত্যাই ছিল এবং এতে কোনো খুন বা ষড়যন্ত্রের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তদন্তে এমন কোনো তথ্য উঠে আসেনি যা এটিকে হত্যা বলে প্রমাণ করতে পারে। রিয়া চক্রবর্তী এবং তাঁর পরিবারকে সমস্ত অভিযোগ থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে।

সিবিআইয়ের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বান্দ্রা আদালতে আমরা এই মামলার ক্লোজার রিপোর্ট জমা দিয়েছি। তদন্তে আত্মহত্যা ছাড়া অন্য কোনো দিক উঠে আসেনি।” আগামী ৮ এপ্রিল বান্দ্রার ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। তবে, এই রায় সুশান্তের ভক্তদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকে এখনো বিশ্বাস করেন যে সত্য প্রকাশিত হয়নি।
পরিবার ও ভক্তদের প্রতিক্রিয়া
সুশান্তের বোন শ্বেতা সিং কীর্তি দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক মাধ্যমে ন্যায়ের জন্য লড়াই চালিয়ে এসেছেন। তিনি বারবার বলেছেন, “আমার ভাইকে ন্যায় দিতে হবে।” তবে সিবিআইয়ের সর্বশেষ রিপোর্ট প্রকাশের পর তিনি এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেননি। অন্যদিকে, সুশান্তের ভক্তরা সামাজিক মাধ্যমে হতাশা প্রকাশ করছেন। তাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, “পাঁচ বছর ধরে তদন্ত চলার পরও কেন সত্য বেরোল না?”
রিয়া চক্রবর্তীর নতুন শুরু
সিবিআইয়ের ক্লিন চিট পাওয়ার পর রিয়া চক্রবর্তী সম্প্রতি মুম্বাইয়ের সিদ্ধিবিনায়ক মন্দিরে পরিবারের সঙ্গে পুজো দিতে গিয়েছেন। এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি এখন নতুনভাবে জীবন শুরু করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
সমাজে প্রভাব
সুশান্তের মৃত্যু এবং তদন্ত শুধু একটি মামলা নয়, এটি ভারতীয় সমাজে মানসিক স্বাস্থ্য, সেলিব্রিটি জীবনের চাপ এবং তদন্ত প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলেছে। তাঁর মৃত্যু অনেককে অবসাদ এবং মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করেছে।
সুশান্ত সিং রাজপুত ছিলেন একজন অসাধারণ মানুষ, যিনি তাঁর প্রতিভা এবং স্বপ্ন দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু মামলার তদন্ত বন্ধ হলেও, তাঁর জীবনের গল্প এবং উত্তরাধিকার চিরকাল মানুষের হৃদয়ে থাকবে। সিবিআইয়ের রিপোর্ট এই রহস্যের একটি অধ্যায় বন্ধ করলেও, ভক্তদের মনে অনেক প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত রয়ে গেছে। আমরা শুধু আশা করতে পারি, সুশান্ত যেখানেই থাকুন, শান্তিতে থাকুন।